Comments

লিভারের সমস্যার ৯ লক্ষণ





লিভার বা যকৃত শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটির অবস্থান পেটের উপরে
ডানপাশে। এর প্রধান কাজ হচ্ছে, ডাইজেস্টিভ ট্র্যাক্ট বা পরিপাক এলাকা থেকে
আসা রক্ত শরীরের অন্যান্য অংশে যাওয়ার আগেই ফিল্টার করে ফেলা।



এছাড়াও এটি শরীরের টক্সিন দূর করে, ওষুধ হজমে ভূমিকা রাখে, পিত্ত নিঃসরণ
করে, গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন উৎপাদন করে এবং অন্যান্য কাজ করে। বিভিন্ন কারণে
লিভারে সমস্যা দেখা দিতে পারে।



নিচে উল্লেখিত লিভারের বড় সমস্যার যেকোনো একটি বা একাধিক উপসর্গ দেখা দিলে বুঝবেন যে চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করার সময় হয়েছে।



১. আপনার চোখ হলদে হয়

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশনের মেডিক্যাল পরিচালক
ডা. কেভি নারায়ানান মেনন বলেন, হলদে চোখ হল একটি উপসর্গ যাতে বুঝা যায় যে
লিভার ভালোমতো কাজ করছে না এবং এটি সম্ভবত লিভার ডিজিজ বা যকৃত রোগের
সবচেয়ে নির্দিষ্ট উপসর্গ। বিলিরুবিন নামক হলুদ রঙয়ের একটি পদার্থ সাধারণত
লিভার দ্বারা বিকল হয়ে শরীর থেকে অপসারিত হয়ে যায়। কিন্তু লিভারে সমস্যা
হলে শরীরে বিলিরুবিন পুঞ্জিভূত হতে থাকে যা চোখের সাদা অংশকে হলদে করে
তোলে।



২. আপনার পেট তরলে ভরে যায়



আপনার পেট যদি হঠাৎ ফুলে যায় এবং তা যদি না থামে, তাহলে এটি সাধারণ
ব্লোটিং বা পেট ফোলার চেয়েও বেশি ফুলে যেতে পারে। ডা. মেনন বলেন, লিভারের
আশেপাশের রক্তনালীসমূহের মধ্যে বর্ধিত চাপ পেটের ভেতর তরল জমা করতে পারে।
গ্যাস, খাবার কিংবা তরলের কারণে আপনার পেট ফুলে গেছে কিনা জানতে ডাক্তার
দেখানো গুরুত্বপূর্ণ।



৩. আপনার হেপাটাইটিস এ, বি অথবা সি আছে



ভাইরাস অথবা প্যারাসাইট বা পরজীবী বা জীবাণু দ্বারা লিভার সংক্রমিত হলে
লিভারে প্রদাহ হয় এবং লিভারের কার্যক্ষমতা কমে যায়। লিভার ইনফেকশন বা যকৃত
সংক্রমণের সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ধরন হল, হেপাটাইটিস ভাইরাস। আক্রান্ত
ব্যক্তির মলের সংস্পর্শে আসলে অথবা দূষিত খাবার ও পানি শরীরে গ্রহণ করলে
হেপাটাইটিস এ ছড়ায়। অন্যদিকে হেপাটাইটিস বি এবং সি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রক্ত,
যৌন মেলামেশা এবং অন্যান্য শারীরিক তরলের মাধ্যমে দেহে প্রেরিত হতে পারে।
ডা. মেনন বলেন, হেপাটাইটিস সি এর জন্য ভালো চিকিৎসা আবিষ্কার হয়েছে, তাই
লোকজনের হেপাটাইটিস সি আছে কিনা পরীক্ষা করা উচিত। লিভার সুস্থ রাখার বিষয়
সম্পর্কে জানতে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন।



৪. আপনি চুলকানি থামাতে পারেন না



আপনি বিশ্বাস করুন কিংবা না করুন, একটি অসুস্থ লিভার শরীরের সর্বত্র
চুলকানির উদ্রেক করতে পারে। ডা. মেনন বলেন, আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না,
কিন্তু এটি বাইল সল্ট বা পিত্ত লবণের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করা হয়।
পিত্ত হচ্ছে লিভার দ্বারা উৎপাদিত পাচন পদার্থ, কিন্তু প্রাইমারি বিলিয়ারি
সিরোসিস (একটি অটোইমিউন যকৃত রোগ যা বাইল ডাক্ট বা পিত্তনালীকে বন্ধ করে
দেয়) রোগে আক্রান্তদের মধ্যে পিত্ত জমা হতে থাকে এবং শরীরে উল্লেখযোগ্য
উপসর্গ (যেমন- চুলকানি) দেখা দেয়।



৫. আপনি প্রতিনিয়ত ক্লান্ত থাকেন



দীর্ঘায়িত ক্লান্তি এমন একটি উপসর্গ যা প্রায় সবসময় শরীর যে ভালো নেই তা
নির্দেশ করতে পারে। লিভার ডিজিজ বা যকৃত রোগ হলেও প্রতিনিয়ত ক্লান্তি
অনুভব করতে পারেন।



৬. আপনি অতিমাত্রায় মদ্যপ থাকেন



অতিরিক্ত ও দীর্ঘমেয়াদে অ্যালকোহল সেবনে লিভারের অনেক ক্ষতি হতে পারে,
এমনকি শেষপর্যন্ত যকৃত রোগও হতে পারে। লিভার শরীরের কেমিক্যাল ও টক্সিন
দূরীকরণে সাহায্য করে, তাই প্রতিনিয়ত মদ্যপানে এটিকে পাম্পিং করার মানে হল
এটিকে ওভারটাইম কর্মে ব্যস্ত রাখা হচ্ছে।



৭. আপনি প্রয়োজনাতিরিক্ত ওজনের অধিকারী



অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা আপনাকে আয়নায় যেমনভাবে দেখায় তার চেয়েও বেশি
শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, চল্লিশোর্ধ্ব এবং
পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ বা
অ্যালকোহলমুক্ত মেদবহুল যকৃত রোগ বেড়ে যায়, যা মূলত লিভারে চর্বি জমার
কারণে হয়ে থাকে। মাঝেমাঝে এ কারণে সিরোসিস বা লিভারে ক্ষত হতে পারে। সুখবর
হল আপনি এ রোগ বা স্থূলতা, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিস বিকাশের
ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়সমূহ নিয়ন্ত্রণ বা পরিবর্তন করতে পারবেন।



৮. আপনার যকৃত রোগের পারিবারিক ইতিহাস আছে



ডা. মেনন বলেন, ছোট শ্রেণীর যকৃত রোগ বংশগতভাবে হয়ে থাকে, তাই আপনার
পরিবারের কোনো সদস্য বা একাধিক সদস্য যকৃত রোগ বা লিভার ক্যানসারে মারা
গিয়ে থাকলে ডাক্তারের সামনে প্রকাশ করুন, যাতে তিনি আরো ভালোভাবে আপনার
যকৃত রোগ পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।



৯. আপনি বুদ্ধিভ্রষ্ট বা বিস্মরণপ্রবণ



সামান্য বিস্মরণ বা ভুলে যাওয়া ভালো বিষয় বলে বিবেচিত, কিন্তু হঠাৎ করে
সবকিছু ভুলে যাওয়া কিংবা সহজেই বুদ্ধিভ্রষ্টতাকে অনপকারী ব্রেইন ফার্ট
(সাময়িক বিস্মরণ) ভাববেন না। হেপাটিক এঞ্চেফ্যালোপ্যাথি (রক্ত থেকে টক্সিন
অপসারণে লিভারের ব্যর্থতার ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া)
হচ্ছে, এমন এক অবস্থা যা লিভার শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে অসমর্থ হলে হয়ে
থাকে এবং তা সাধারণত সেসব রোগীদের হয়ে থাকে যাদের দীর্ঘস্থায়ী যকৃত রোগ,
সিরোসিস অথবা হেপাটাইটিস আছে।



তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

Post a Comment

0 Comments