![]() |
ডিএনএর ‘৩ডি’ ইলাস্ট্রেশন [ছবি: সংগৃহীত] |
চিকিত্সা বিজ্ঞানের জন্য ২০১৯ সালটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ একটি বছর
ছিল। নিরাময় অযোগ্য অসুখের চিকিত্সা পদ্ধতি আবিষ্কার থেকে শুরু করে
প্যারালাইসিস সারানোর উপায় বের করার মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা রয়েছে এ বছর।
প্যারালাইসিস সারানোর জন্য আবিষ্কার হয়েছে রোবো-স্যুট। গবেষকদের মতে,
একদিন এই স্যুট বা পদ্ধতি হয়তো রোগীদের জীবনমান পালটাতে পারবে। তবে
পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষ যেন তাদের হাত ও বাহু নাড়া-চাড়া করতে পারে সে জন্য
তাদের শরীরের নার্ভ বা স্নায়ুগুলোকে ‘রিওয়্যার’ বা পুনঃসংযোগ দেওয়া হয়েছে।
নতুন এই চিকিত্সা পদ্ধতিতে পক্ষাঘাতগ্রস্ত অস্ট্রেলিয়ার অনেক রোগী এখন নিজে
নিজেই খেতে পারছেন, চাবি দিয়ে তালা খুলতে পারছেন, টাকা গুনতে পারছেন;
এমনকি কম্পিউটারে টাইপও করতে পারছেন।
এছাড়া মস্তিষ্কের এক গুরুতর রোগে আক্রান্ত এক মেয়ের জন্য তার চিকিৎসক
মাত্র এক বছরেই বানিয়েছেন অভাবনীয় ওষুধ। মস্তিষ্কের দুরারোগ্য রোগ ‘ব্যাটন
ডিজিস’-এ আক্রান্ত হয় ৮ বছর বয়সী মিলা। বোস্টনে মিলার মেডিক্যাল বোর্ডের
সদস্যরা তার ডিএনএর পুরো জিনোম সিকোয়েন্স করে তার জেনেটিক কোড বের করেন এবং
কোনো জেনেটিক মিউটেশনের কারণে তার এই রোগ হলো সেটিও তারা বের করে ফেলতে
সক্ষম হন। তার জেনেটিক মিউটেশনের ত্রুটি খুঁজে বের করতে সফল হওয়ার পর
চিকিত্সকরা মিলাকে সুস্থ করার বিষয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছে। এরপর তারা একটি
বিশেষ ওষুধ তৈরি করে এবং মিলার ওপরে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করেন। মিলা
যদিও এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি কিন্তু এখন আগের চেয়ে অনেক গুণ ভালো রয়েছে।
জিন-সাইলেন্সিং ওষুধ আবিষ্কার করে চিকিত্সা বিজ্ঞানে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল
বিজ্ঞানীরা। নতুন ধরনের এই ওষুধটিকে ডাকা হচ্ছে জিন-সাইলেন্সি। মূলত
নিরাময় অযোগ্য ব্যথার অসুখের চিকিত্সায় সমর্থ হয়েছে ওষুধটি। নতুন এই
জিন-সাইলেন্সিং ওষুধটি বার্তাবাহক আরএনএকে বিনাশ করে দেয়।
ক্যানসার চিকিত্সায়ও সাফল্য লাভ করেছেন বিজ্ঞানীরা। ক্যানসারের ইমিউনো
থেরাপি আবিষ্কারের ফলে তা রোগীর ইমিউন সিস্টেম বা নিজের রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। এই পদ্ধতিতে ত্বকের ক্যানসার বা মেলানোমায়
আক্রান্ত অর্ধেক রোগীই এখন সুস্থ হয়ে উঠছেন। অথচ মাত্র এক দশক আগেও তা ছিল
দুরারোগ্য ব্যাধি।
আলঝেইমার বা স্মৃতিভ্রমের মতো রোগের তীব্রতা কমিয়ে দিতে পারে এমন ওষুধও
আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে মার্কিন ওষুধ-প্রস্তুতকারী কোম্পানি।
‘এডুকেনাম্ব’ নামের এই ওষুধটি মানুষের মস্তিষ্কের ভেতরে জমা বিষাক্ত
প্রোটিন দূর করতে পারে। গত বছর অক্টোবরে এই ওষুধের ঘোষণা দেওয়ার পর সেটি
রীতিমত হইচই ফেলে দিয়েছিল।
ডিএনএ কে সম্পাদনা করার নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন
বিজ্ঞানীরা। ডিএনএতে থাকা যে কোডের কারণে নানান রোগ-বালাই হয় সেগুলো ৮৯
শতাংশ পর্যন্ত সারানো সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। নতুন এই প্রযুক্তির নাম
প্রাইম এডিটিং। প্রাইম এডিটিংকে ‘জেনেটিক ওয়ার্ড’ প্রসেসর হিসেবেও অভিহিত
করা হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা এমন এক ধরনের ব্রেইন ইমপ্ল্যান্ট পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে যেটি
মানুষের মনকে পড়তে পারে এবং সেটিকে কথায় রূপান্তর করতে পারে। এই পদ্ধতিতে
প্রথমে একটি ইলেকট্রোড মানুষের মস্তিষ্কে স্থাপন করা হয়। ইলেকট্রোডের কাজ
হচ্ছে মানুষের ব্রেন থেকে ইলেক্ট্রনিক সিগন্যাল বা বৈদ্যুতিক নির্দেশনা
গ্রহণ করে সেটি ঠোঁট, গলা, কণ্ঠনালী ও চোয়াল পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া। তারপর
শক্তিশালী কম্পিউটারের মাধ্যমে এই মুখ ও গলার মুভমেন্ট বা নড়াচড়া প্রত্যক্ষ
করে বিভিন্ন শব্দ উৎপন্ন করা।-বিবিসি
0 Comments